Festival of colors_ Dol Purnima_Nera_Pora_দোল_উৎসব_ন্যাড়া পোড়ানো_কি_
হোলি বা দোল কেনো পালন করা হয়?
ন্যাড়াপোড়া কি?
|
হোলি বা দোল কেনো পালন করা হয়?ন্যাড়াপোড়া কি? |
Holi Festival India
হিন্দু ধর্মের একটি প্রধান উৎসব হল দোল পূর্ণিমা যা সাধারণত বসন্ত ঋতুতে অর্থাৎ ফাল্গুন মাসে বাংলায় এবং সারা ভারতবর্ষ জুড়ে পালন করা হয় । বসন্ত উৎসবটি শুধু মাত্র ভারতবর্ষের প্রধান উৎসব তা নয়
বিদেশেও অনেক জায়গাতে এই দিনটিকে " Festival of color " এই নামটিতে মানুষ জানে বেশি এই উৎসবটি একটি সামাজিক উৎসব তাই পরিবারের বাবা মা ভাই বোন ও বন্ধুদের সঙ্গে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে রং খেলে এই দিনটি পালন করা হয় ।
সারা পৃথিবী জুড়ে এই উৎসবটি অত্যন্ত আনন্দের সাথে মানুষ পালন করে । বসন্ত উৎসবকে বাংলায় অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে দোল পূর্ণিমা এবং হোলি এই দুটি ভাগে ভাগ করা হয় ।
এবার এ দুটি ভাগ সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক ।
সেইগুলি হলো ---
প্রথমত:- দোলযাত্রা অর্থাৎ দোল পূর্ণিমার দিনই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে আবির উৎসর্গ করা হয় এবং গুরুজনদের পায়ে আবির দেওয়া হয় এবং তাদের আশির্বাদ নেওয়া হয়
দ্বিতীয়ত:- সঙ্গে ঠিক তার পরেরদিন পুরো শহরজুড়ে ছোট থেকে বড়ো সবাই আবির, রং এর খেলাই মেতে উঠে
এবং তারপর মিষ্টি মুখ করা হয় ও মালপোয়া, লস্যি। আবার ভাং খওয়া হয় এই দিনটিকে পালন করার জন্য ।
এই উৎসবটিতে আমাদের পশ্চিমবাংলার বোলপুরের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে অত্যন্ত বড় করে বসন্ত উৎসব পালন করা হয় এবং সেই সময় বিদেশ থেকে নানা মানুষ এই উৎসবে এসে যোগদান করে সেজন্য এ উৎসবকে আমরা বিশ্বসংস্কৃতিক উৎসব হিসেবেও জেনে থাকি । প্রায় সমস্ত দেশে উৎসবটি বিভিন্ন আকারে ছোট বড় বিভিন্ন আকারে পালন করা হয় । শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই নয়, ভারতবর্ষের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি যেমন নেপাল, বাংলাদেশ এ সমস্ত জায়গাতেও এই হোলি উৎসব পালন করা হয়।
দোল বা হোলির অর্থ এক হলেও দুটি ভিন্ন অনুষ্ঠান । দোল ও হোলি কখনোই একদিনে পড়ে না ।
দোলযাত্রা বা বসন্ত উৎসব একান্তই বাঙ্গালীদের রঙিন উৎসব আর হোলি হলো অবাঙালিদের উৎসব
বাঙ্গালীদের মধ্যে দোলযাত্রাকে বসন্তের আগমনী বার্তা হিসেবে বিবেচনা করবেন
বৈষ্ণবদের মতে, দোল পূর্ণিমার দিন শ্রীকৃষ্ণ আবির নিয়ে
রাধা ও অন্যান্য গোপীদের সঙ্গে রং খেলায় মেতে উঠে
সেখান থেকেই এই দোলযাত্রা সূত্রপাত বা দোলযাত্রা শুরু হয় । ১৪৮৬ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি দোল পূর্ণিমার তিথিতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম গ্রহণ কে কেন্দ্র করেও এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে অনেক জায়গায় । অনেকে আবার ইতি থেকে গৌর পূর্ণিমা ও বলে থাকে বা বলে । তবে শ্রীকৃষ্ণ ও তার সাথীদের সঙ্গে রঙ খেলারি অনুষ্ঠানটিকেই দোলযাত্রার মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ধরা হয় । শ্রীকৃষ্ণের লীলা কবে থেকে বা কোথা থেকে শুরু হয়েছিল তা না জানা গেলেও বিভিন্ন পুরাণ ও গ্রন্থে সেই মধুর রঙিন গল্পের কথা উল্লেখ রয়েছে ।
এবার আসা যাক ন্যাড়াপোড়ার গল্পে । অনেকেরই মনে প্রশ্ন হয় ন্যাড়া পোড়াটা কি ন্যাড়া পোড়াটা কেন করা হয় ন্যাড়া পোড়ানো হয় কেন
এই ন্যাড়া পোড়া নিয়ে বাংলায় কিছু মজার ছড়াও প্রচলিত আছে ।
" আজ আমাদের ন্যাড়াপোড়া কাল আমাদের দোল পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বল হরি বোল "।
এই বছর বাংলার ১৪২৯ সালে ২২ এ ফাল্গুন দোল পূর্ণিমা
অর্থাৎ( 7 March 2023)
সেই হিসেবে তার আগের দিন সন্ধ্যায় অর্থাৎ 6 মার্চ ন্যাড়া পোড়ানো হয় । পশ্চিমবঙ্গে যেটাকে আমরা ন্যাড়া পোড়া নামে চিনি বা ন্যাড়া পোরা নামে পশ্চিমবঙ্গে যে জিনিসটা পরিচিত সেই জিনিসটা বাইরে বা অন্যান্য প্রান্তে অবাঙালিদের কাছে চাঁচর বা হোলিকা দহন নামে পরিচিত
সাধারণত ন্যাড়া পোড়ার জন্য শুকনো গাছের ডাল, কাঠ, বাঁশ, খড় এবং শুকনো পাতা ব্যবহার করা হয় । তারপর ফাগুন পূর্ণিমার সন্ধ্যায় সবগুলোকে একসঙ্গে রেখে পোরানো হয়
হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে প্রত্যেক বছর ফাগুন পূর্ণিমার রাতে ন্যাড়া পোড়ানো হয় ।
কিন্তু কেন প্রশ্নটা এখানেই ?
ন্যাড়া পোড়ানো হয় কেন ?
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, রাক্ষসের রাজা হিরণ্যকশিপু প্রজাদের নির্দেশ দেন যে ভগবানের পূজা করা বন্ধ করতে হবে । কিন্তু অপরদিকে কি তিনি অমরত্ব লাভের জন্য বা অমরত্ব লাভ করার জন্য ভগবান ব্রহ্মার তপস্যা করা শুরু করেন । তিনি তার তপস্যায় সাফল্য হন । তার তপস্যায় ব্রহ্মা সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বরদান দেন পাঁচটি
- কোন মানুষ বা কোন প্রাণী তাকে মারতে পারবেনা।
- ঘরের ভেতরে বা বাইরে তার মৃত্যু হবে না ।
- দিনেও তার মৃত্যু হবেনা এবং রাত্রেও তার মৃত্যু হবে না।
- কোনরকম কোন অস্ত্রশস্ত্র দাঁড়াও তার মৃত্যু হবে না।
- এমনকি জমিতে জলে শূন্যে কোথাও তার মৃত্যু হবে না।
এই পাঁচটি বর পাওয়ার পর রাক্ষস রাজা নিজেকে অমর মনে করেন । অমর মনে করতে শুরু করেন এবং তার অত্যাচার দিনে দিনে বাড়তে থাকে । কিন্তু তার একটা সন্তান ছিল যার নাম প্রহ্লাদ ।
তবে তার সন্তান প্রহ্লাদ সে বিষ্ণুর পরম ভক্ত ছিল । প্রহ্লাদ বাবার কথা না শুনে বিষ্ণুর আরাধনা করতেন দিনরাত । তাই তার বাবা হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় । হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে হত্যা করার জন্য নিজের বোন হোলিকার সাহায্য নেন । আবার অপরদিকে হোলিকা হিরণ্যকশিপুর ভগবান ব্রহ্মার কাছে থেকে একটি চাদর পেয়েছিলেন এবং এই চাদর হোলিকাকে সব সময় সমস্ত বিপদ থেকে আগলে রাখতে রক্ষা করত । হোলিকা হিরণ্যকোকে জানান যে তিনি প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনের মধ্যে বসবেন । আর তার গায়ে ব্রহ্মার দেওয়া চাদর থাকবে কাজেই হোলিকার কিছুই হবে না কিন্তু প্রহ্লাদ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে ।
কিন্তু যখন প্রহ্লাদকে নিয়ে হোলিকা আগুনের মধ্যে প্রবেশ করেন, ঠিক সেই সময় ওই ব্রহ্মার দেওয়ার চাদর হোলিকার গা থেকে সরে গিয়ে প্রহ্লাদের উপরে পড়ে । এর ফলে প্রহ্লাদের কিছু না হলেও হোলিকা তখনই পুরো ছাই হয়ে যায় । সেই হোলিকার এই মৃত্যুর ঘটনার সময় থেকেই শুরু হয়েছে হোলিকা দহন প্রথা । বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে দোল বা হোলি, এর আগের দিন হোলিকা দহন করলে মনের সমস্ত
পাপ, হিংসা, লোভ, অহংকার পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
|
হোলিকা প্রহ্লাদ কে নিয়ে আগুনে বসেছে |
আর এই জন্যই সেই সময় থেকে চলে আসা প্রথা আজ ন্যাড়াপোড়ার নামে প্রচলন হয়েছে । আজও দোলের আগের দিন ন্যাড়া পোড়ানো হয় । আর বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দারা হোলিকা দহন, চাচর, ন্যাড়া পোড়ানো পালন করে থাকে । ন্যাড়া পোড়ানো বা হোলিকা দহন এর উদ্দেশ্য অশুভ সব কিছুর বিনাশ ঘটানো । Dol purnima, holi story,nera pora
COMMENTS